ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪

কয়লা উধাও- তদন্তের নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী   

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:১৫, ২৩ জুলাই ২০১৮

দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা উধাও হয়ে গেছে। প্রায় সোয়া লাখ টন কয়লা কোথায় গেল তার ‘পূর্ণ তদন্ত’ করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।  

দুর্নীতি দমন কমিশন কয়লা উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় অনুসন্ধানের ঘোষণা দেওয়ার পর সোমবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা সাংবাদিকদের জানান।

কয়লা উধাওয়ের ঘটনায় মামলা করার জন্যও ইতোমধ্যে পেট্রোবাংলাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।

কয়লা সরবরাহ না পাওয়ায় বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন রোববার রাতে বন্ধ হয়ে গেছে।

ক্ষমতার অপব্যবহার, জালিয়াতি, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ১ লাখ ১৬ হাজার টন কয়লা খোলা বাজারে বিক্রি করে আনুমানিক ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে বড় পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবীব উদ্দিন আহমদ ও অন্যদের বিরুদ্ধে।

এনিয়ে আলোচনার মধ্যে সোমবার ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস উদযাপন ও জনপ্রশাসন পদক বিতরণ অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ে তার কার্যালয়ে যান। সেখানে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট সচিব, পিডিবি ও পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠকে করেন তিনি।

বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নে নসরুল হামিদ বলেন, “উনি (প্রধানমন্ত্রী) পূর্ণ তদন্ত করতে বলেছেন।

“কারণ ঘটনাটা হয়ে আসছে প্রায় ২০০৫ সাল থেকে। আমরা পুরোটা কাজে নেমেছি।

“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়টাই বলেছেন যে, সকলকে জানান দেওয়া। সকলকে আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া, সকলে যেন ধৈর্য ধরে,” বলেন নসরুল।

প্রধানমন্ত্রী কি এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ- এক সাংবাদিকের প্রশ্নে তিনি বলেন, “অবশ্যই, উনি তো আমার মন্ত্রী, এই বিভাগের মন্ত্রী।”

প্রতিমন্ত্রীর আগে পিডিবির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ বিদ্যুৎ ভবনে সাংবাদিকদের বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মানুষের যেন ভোগান্তি কম হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে।”

বড়পুকুরিয়া খনির এই কয়লা ব্যবহৃত হয় বিদ্যুৎকেন্দ্রে বড়পুকুরিয়া খনির এই কয়লা ব্যবহৃত হয় বিদ্যুৎকেন্দ্রে
খনির কোল ইয়ার্ড থেকে কয়লা উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির শীর্ষ পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

কয়লা নিয়ে দুর্নীতির খবর অনুসন্ধানের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

প্রতিমন্ত্রী কয়লা খনির কর্মকর্তাদের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন।

তিনি বলেন, “দুমাস আগে থেকেই বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে বলা হচ্ছিল যে, আমাদের কয়লার সঙ্কট চলছে। কিন্তু ওখানকার যে প্রধান প্রকৌশলী তিনি বলছিলেন, না কোনো সঙ্কট নেই। তখন বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে তদন্ত দল পাঠানোর পর তথ্যটা উদঘাটন হল।”

কয়লার এই অবস্থা জানাজানির পর বৃহস্পতিবার রাতে এক অফিস আদেশে খনির মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) নুরুজ্জামান চৌধুরী ও উপ-মহাব্যবস্থাপক (স্টোর) খালেদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করে।

ওই রাতেই খনির শীর্ষ কর্মকর্তা ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিব উদ্দিন আহমদকে অপসারণ করে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। আর মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও কোম্পানি সচিব) আবুল কাশেম প্রধানিয়াকে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড সিরাজগঞ্জে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পেয়েছেন পেট্রোবাংলার পরিচালক আইয়ুব খান। ঢাকা থেকে গিয়ে এরইমধ্যে দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি।

এদিকে ঘটনা তদন্তে পেট্রোবাংলার পরিচালক কামরুজ্জামানকে প্রধান করে শুক্রবার তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এ তদন্ত প্রতিবেদন মঙ্গলবারের মধ্যে পাওয়া যাবে বলে জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, “তদন্ত প্রতিবেদনে জানতে চাচ্ছি, কয়লার অস্তিত্বটা কোথায়?”

দোষীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে- জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “ইতোমধ্যেই তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে কেইস করার জন্য। তদন্ত চলবে। শাস্তি পাবে।

“এটা তো একদিনে হয়নি। এটা বহুদিনের ব্যাপার। অনেকে বলছেন, ২০০৫ সাল থেকে। পেছনের দিকে যেসকল ব্যক্তি আছেন আমরা তাদেরকেও তদন্ত করে দেখতে চায়। তাদের সময়কার অবস্থাটা কী ছিল?”

পেট্রোবাংলার তদারকিতে কোনো সমস্যা ছিল কি না- জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “আমি বলব, অবশ্যই সমস্যা ছিল। পেট্রোবাংলার অধীনের কোম্পানি। ওভারঅল তার মনিটিরংতো থাকতেই হবে।

পরিস্থিতি যেভাবে সামাল দেওয়ার চেষ্টা

৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার বড়পুকুরিয়া কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ থাকায় রংপুর বিভাগের আট জেলা বিদ্যুৎ সঙ্কটে পড়ায় বিকল্প পথ খুঁজছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জানান, উত্তরাঞ্চলে বৃহত্তর রংপুর ও রংপুর সদর অঞ্চলে বিদ্যুতের অবস্থা ‘স্বাভাবিক’ হতে আরো মাসখানেক সময় লাগবে।

শিফট পরিবর্তন করে অগাস্টের শেষে নতুন করে কয়লা উত্তোলন শুরু হলে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র পুনরায় চালু হবে বলে জানান তিনি।

‘সাময়িক’ ভোগান্তির জন্য ক্ষমা চেয়ে নসরুল বলেন, “বিদ্যুৎ বিভাগ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। একটা মাস ধৈর্য ধরার জন্য আমি সকলের কাছে অনুরোধ করছি। আমরা দুঃখিত এ বিষয়ের জন্য।”

বিদুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নর্দার্ন ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো)-এর রংপুর অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী শাহাদৎ হোসেন সরকার বলেন, রংপুর বিভাগের আট জেলায় প্রতিদিন ৬৫০ মেগওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। এর বেশিরভাগই আসত বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে।

এর বাইরে রংপুর ও সৈয়দপুরে ২০ মেগাওয়াট করে ৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতার তেলভিত্তিক দুটি ছোট বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। এর পাশাপাশি সিরাজগঞ্জের কেন্দ্রগুলো থেকে রংপুরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়িয়ে সেখানকার পরিস্থিতি ‘কিছুটা’ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

পিডিবির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ বিদ্যুৎ ভবনে সাংবাদিকদের বলেন, “কয়লা ছাড়াও কিভাবে সিস্টেমটাকে ঠিক রাখতে পারি, সে চেষ্টাই করছি আমরা।”

তিনি জানান, সিরাজগঞ্জে ৪৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি কেন্দ্র চালু আছে এবং ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরেকটি নতুন কেন্দ্র পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হয়েছে। এই কেন্দ্রটি ২৭ জুলাই থেকে চালু হবে।

রংপুর অঞ্চলে বিদ্যুতের ঘাটতি ১০০ মেগাওয়াটের মধ্যে রাখার চেষ্টা করা হবে জানান খালেদ মাহমুদ।

এছাড়া সিরাজগঞ্জ থেকে ১৫০ কিলোমিটার বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়ে যাওয়ায় ভোল্টেজ কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এসি  

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি